কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ ছিল বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের এক সাহসী ও ঐতিহাসিক প্রতিবাদ। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বাতিল ও সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা দেশব্যাপী আন্দোলনে নামে। এটি ছিল শুধু একটি চাকরির দাবির আন্দোলন নয়, বরং সমাজে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠিত এক বিশাল ছাত্র অভ্যুত্থান।
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ছিল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার প্রদান। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর এই ব্যবস্থার কারণে মেধাবীরা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হতে থাকে। পরীক্ষায় মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হয়েও অনেকে চাকরি পাচ্ছিল না, যার ফলে ছাত্র সমাজের মধ্যে চাপা ক্ষোভ জমতে থাকে।
এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০২৪ সালে, যখন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা একত্রিত হয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে নামে। "যুক্তি, তর্ক, আন্দোলন" স্লোগান নিয়ে তারা ঢাকাসহ সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও র্যালি করে। এই আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষও সমর্থন জানান।
দুঃখজনকভাবে এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কিছু জায়গায় দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস, এমনকি গুলি ছোঁড়ার মতো ঘটনাও ঘটে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ছাত্রদের রক্তাক্ত ছবি, যা গোটা জাতিকে নাড়া দেয়। বরিশাল, রাজশাহী, ও চট্টগ্রামে ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে, এবং একাধিক ছাত্র গুরুতর আহত হন। অভিযোগ ওঠে, কিছু ক্ষেত্রে ছাত্ররা নিহতও হয়। এই ঘটনাগুলো আন্দোলনকে আরও জোরালো করে তোলে।
ছাত্রদের ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে সরকার শুরুতে কঠোর অবস্থান নিলেও পরে আন্দোলনের ন্যায্যতা বিবেচনায় কিছু পরিবর্তনের আশ্বাস দেয়। তদন্ত কমিটি গঠন, আলোচনা শুরুর ঘোষণা, ও কোটা পুনর্বিন্যাসের আশ্বাস আসে। তবে ছাত্রদের দাবি ছিল পূর্ণাঙ্গ সংস্কার এবং কার্যকর বাস্তবায়ন।
এই আন্দোলন প্রমাণ করে, বর্তমান প্রজন্ম শুধু নিজের জন্য নয়, একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা শান্তিপূর্ণ, তথ্যনির্ভর ও সংগঠিত প্রতিবাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পেরেছে। এটি ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ একটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এটি দেখিয়ে দিয়েছে যে, তরুণরাই পারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে। রাষ্ট্র যদি এই কণ্ঠস্বর শুনতে ব্যর্থ হয়, তবে সমাজে বৈষম্য ও ক্ষোভ আরও বাড়বে। কিন্তু যথাযথ প্রতিক্রিয়া ও সংস্কারই পারে একটি সাম্যভিত্তিক ভবিষ্যতের দিক দেখাতে।